সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচী

আপনার শিশুকে টিকা দিন
৮টি মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করুন
......................................................................................................................................

▣ ০ - ১১ মাস বয়সী শিশুদের টিকাদান সময়সূচীঃ
.....................................................................................................................................

 
▣ হেপাটাইটিস-বি (হেপ-বি) :

কারণঃ
হেপাইটিস-বি লিভারের একটি মারাত্মক রোগ, যা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। এমনকি অনেক বছর পরও লিভারে মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে।
উপযুক্ত পরিবেশে মানব দেহের বাইরেও এই ভাইরাস কমপক্ষে ৭দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে।
হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত রোগীর রক্ত এবং দেহ রসের মাধ্যমে ছড়ায়।

সংক্রমণঃ
এই ভাইরাস একজন হতে আরেকজনের শরীরে নিম্নলিখিত উপায়ে সংক্রমিত হয় -

- জন্মের সময় নবজাতক তার মায়ের কাছ থেকে সংক্রমিত হতে পারে। মা যদি পূর্বে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত থাকে সেক্ষেত্রে শিশুটি যখন তার মায়ের রক্ত বা জরায়ু হতে নিঃসরিত রসের সংস্পর্শে আসে তখনই সংক্রমিত হয়। বুকের দুধের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয় না।

- খেলাধূলার সময় আঘাতের কারণে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত শিশু হতে রক্ত বা অন্যান্য দেহ রসের মাধ্যমে সুস্থ্য শিশুতে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

- ইনজেকশন দেবার সময় জীবাণুমুক্ত সরঞ্জামাদি ব্যবহার না করলে বা দূষিত রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে একজন হতে আরেকজন সংক্রমিত হতে পারে।

- অনিরাপদ যৌন মিলনের মাধ্যমেও এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

লক্ষণঃ
নবজাতক এবং শিশুরাই জীবনের শুরুতেই প্রধানতঃ এ রোগে আক্রান্ত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুদের মধ্যে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ প্রতিফলিত হয় না। কিন্তু পরবর্তীতে এসব শিশুরাই হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী বাহক হিসেবে থাকে।

প্রথমবারের মত যখন একজন কিশোর/কিশোরী বা প্রাপ্ত বয়স্ক লোক হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তখন তার মধ্যে সাধারণতঃ নিম্নলিখিত লক্ষণ সমূহ দেখা যায় -

- চামড়া ও চোখ হলুদ হয়ে যায়। একে জন্ডিস বলে
- প্রস্রাবের রং হলুদ হয়
- পেটে ব্যথা এবং সেই সাথে জ্বর হয়
- ক্ষুধামন্দা এবং বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে
- মাংসপেশী এবং হাড়ের সংযোগস্থলে (গিটে) ব্যথা হয়
- আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় অস্বস্তি অনুভব করে

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে,হেপাটাইটিসের যে কোন ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেই জন্ডিস দেখা যায়। আর হেপাটইটিস-বি ভ্যাকসিন শুধুমাত্র ‘বি’ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। সুতরাং নিশ্চিত করে বলা যায় না যে, হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন দেয়ার পর আর জন্ডিস হবে না। কারণ ‘বি’ ভাইরাস ছাড়াও বাকী ৪ প্রকার (হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘সি’, ‘ডি’ এবং ‘ই’) ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জন্ডিস হতে পারে।

ভয়াবহতাঃ
হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুরাই ভবিষ্যতে হেপাটাইটিস -বি ভাইরাসের দীর্ঘ মেয়াদী বাহক হওয়ার ক্ষেত্রে বেশী ঝুঁকিপূর্ণ এবং অন্যদের মাঝে ভাইরাস সংক্রমিত করে। যার ফলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের কারণে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

প্রতিরোধঃ
৩ ডোজ হেপাটাইটিস-বি টিকা দিলে এটি শিশুকে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস থেকে রক্ষা করবে। শিশুর বয়স ৬ সপ্তাহ হলেই হেপাটাইটিস-বি টিকার ১ম ডোজ দিতে হবে এবং ২৮ দিন বা ১ মাস পরে ২য় ও ৩য় ডোজ হেপাটাইটিস-বি টিকা দিতে হবে। (হেপাটাইটিস-বি টিকা পেন্টাভেলেন্ট হিসেবে ডিপিটি টিকার সাথে দেয়া হয়)।


..........................................................................................................................................................
পোলিও (পোলিও মাইলাইটিস) :

কারণঃ
আক্রান্ত শিশুর মল দ্বারা দূষিত পানি খেলে বা আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এলে এই রোগ হতে পারে।

জীবানুর নামঃ
পোলিও ভাইরাস (Polio virus)

লক্ষণঃ
১-৩ দিন:
শিশুর সর্দি, কাশি এবং সামান্য জ্বর হয়।

১-৫ দিন:
মাথা ব্যাথা করে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়
জ্বর থাকে
শিশুর হাত অথবা পা অবশ হয়ে যায়
শিশু দাঁড়াতে চায় না
উঁচু করে ধরলে আক্রান্ত পায়ের পাতা ঝুলে পড়ে
দাঁড়া করাতে চাইলে শিশু কান্নাকাটি করে এবং নাড়াচড়া করতে পারে না
শিশুর আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমশ দুর্বল হয় এবং পরে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।

ভয়াবহতাঃ
শিশুর এক বা একাধিক অঙ্গ অবশ হয়ে য়ায়। ফলে আক্রান্ত অঙ্গ দিয়ে স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না । আক্রান্ত অঙ্গের মাংসপেশী চিকন হয়ে যায় । শ্বাস প্রশ্বাসের পেশী অবশ হয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে শিশু মারাও যেতে পারে।

প্রতিরোধঃ
এক মাস পর তিন ডোজ এবং হামের টিকা দেওয়ার সময় আরো একবার অর্থাৎ মোট চার বার পোলিও টিকা শিশুর এক বছর বয়সের ভিতরে খাওয়ানো হলে তা শিশুর দেহে পোলিও রোগ প্রতিরোধ করে। প্রথম ডোজ দেয়ার সবচেয়ে ভালো সময় শিশুর ৬ সপ্তাহ বয়স। যদি কোন শিশু ক্লিনিক বা হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে তাহলে তাকে জম্মের পর পরই এক ডোজ পোলিও টিকা দিতে হবে। এটাকে অতিরিক্ত ডোজ বলে গণ্য করতে হবে। এবং শিশুর ৬ সপ্তাহ বয়সে থেকে নিয়মিত চার ডোজের সিডিউল শুরু করতে হবে।
.......................................................................................................................................................... 
হাম :

কারণঃ
হামে আক্রান্ত শিশুর কাছ থেকে এই রোগের জীবানু বাতাসের মাধ্যমে সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং হাম রোগ সৃষ্টি করে।

জীবানুর নামঃ
হাম ভাইরাস (Measles virus)

 
লক্ষণঃ
১-৩ দিন:
বেশী জ্বর, সর্দি, কাশি
চোখ লাল হয়ে যায় এবং পানিতে টল টল করে

চতুর্থ দিন:
জ্বর কমে আসে
মুখে এবং শরীরে লালচে দানা দেখা দেয়

হামে দানা উঠার ৩/৪ দিন পর দানা কালচে হয়ে একসময় খুসকির মতো হয়ে ঝরে যায়।

ভয়াবহতাঃ
হামের ফলে শিশু নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও পুষ্টিহীনতায় ভোগে। কান পাকা রোগ হতে পারে। শিশুর রাতকানা রোগ দেখা দিতে পারে, এমনকি চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। হামের নানা জটিলতার কারণে অনেক শিশু মারও যায়।

প্রতিরোধঃ
শিশুর ৯ মাস বয়স পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে তাকে এক ডোজ হামের টিকা দিলে সে হাম রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে । তবে এই টিকা অবশ্যই এক বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেওয়া উচিত। পুষ্টিহীন শিশুরা হামের পরে মারাত্নক রোগ পরবর্তী জটিলতার সম্মুখীন হয়। পুষ্টিহীন শিশুদের পুষ্টিকর পরিপূরক খাবার দিলে তা তাদেরকে হাম পরবর্তী অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। হামে আক্রান্ত শিশুকে অবশ্যই এক ডোজ ভিটামিন- এ খাওয়াতে হবে।
  .......................................................................................................................................................... 
**  তথ্য সংগ্রহঃ https://www.facebook.com/ApanarShishukeTikaDin **
 

:: Copyright © Upazila Health Complex Baliadangi : Powered by UHC : Designed by SuPtO ::